যোনি স্রাব কী এবং এটি কেন হয়?
যোনি স্রাব একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা যোনিরস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি যোনিকে পরিষ্কার রাখতে, মৃত কোষ অপসারণ করতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। আপনার মাসিক চক্রের সময় এর রঙ ও ঘনত্ব পরিবর্তিত হতে পারে এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ইঙ্গিত দিতে পারে।
যোনি স্রাব প্রায় প্রতিটি নারীই অনুভব করেন এবং এর প্রধান উদ্দেশ্য হল যোনির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। আসুন, যোনি স্রাব সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর জানি।
১. স্বাভাবিক যোনি স্রাব কেমন দেখায়?
স্বাভাবিক যোনি স্রাব সাধারণত স্বচ্ছ, সাদা বা ফ্যাকাসে সাদা রঙের হয় এবং মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে এর ঘনত্ব পরিবর্তিত হতে পারে। এটি সাধারণত গন্ধহীন হয় বা হালকা গন্ধ থাকতে পারে। ডিম্বস্ফোটন (ovulation) চলাকালীন এটি সামান্য ঘন এবং বেশি পরিমাণে হতে পারে। এই স্রাব যোনিকে পরিষ্কার রাখতে ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করে।
২. অস্বাভাবিক যোনি স্রাবের কারণ কী?
অস্বাভাবিক স্রাব শরীরের কোনো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি স্রাবের রঙ হলুদ, সবুজ, বা ধূসর হয় এবং এতে তীব্র বা দুর্গন্ধ থাকে, তবে এটি ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (Bacterial Vaginosis), ইস্ট ইনফেকশন (Yeast Infection) বা যৌন সংক্রমণজনিত রোগ (STI) এর লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও, যদি স্রাবের সঙ্গে চুলকানি, জ্বালা বা ব্যথা অনুভূত হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. যোনি স্রাব কি গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে?
হ্যাঁ, যোনি স্রাব গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি সাধারণত ঘন, দুধের মতো সাদা এবং গন্ধহীন হয়। এটি স্বাভাবিক হলেও, যদি স্রাবের রঙ বা গন্ধ পরিবর্তিত হয় বা ব্যথার সঙ্গে থাকে, তবে সংক্রমণের সম্ভাবনা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. অস্বাভাবিক যোনি স্রাব পরীক্ষার জন্য কী করা হয়?
অস্বাভাবিক স্রাবের কারণ নির্ণয় করতে চিকিৎসক নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করতে পারেন:
- পেলভিক পরীক্ষা (Pelvic Exam): চিকিৎসক যোনির ভেতরের অংশ পরীক্ষা করে কোনো সংক্রমণ বা অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা নির্ধারণ করেন।
- মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা (Microscopic Examination): স্রাবের নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ইস্ট, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য সংক্রমণ আছে কিনা তা দেখা হয়।
- কালচার টেস্ট (Culture Test): কিছু ক্ষেত্রে, সংক্রমণের নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট শনাক্ত করতে স্রাবের কালচার করা হয়।
- STI পরীক্ষা: যদি যৌন সংক্রমণ (STI) সন্দেহ করা হয়, তবে ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া বা ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis) চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ পরীক্ষা করা হতে পারে।
৫. অতিরিক্ত যোনি স্রাব কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
অতিরিক্ত স্রাব কখনো কখনো অস্বস্তিকর মনে হতে পারে, তবে সাধারণত এটি ক্ষতিকারক নয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ দেওয়া হলো:
- বাতাস চলাচল করতে পারে এমন তুলার অন্তর্বাস পরিধান করুন।
- অতিরিক্ত স্রাব শোষণ করতে সুগন্ধবিহীন প্যান্টি লাইনার ব্যবহার করুন, তবে জ্বালা এড়াতে নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
- সুগন্ধযুক্ত সাবান, ডুচিং (douching), বা এমন পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন যা যোনির স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
যদি স্রাব অত্যধিক অস্বস্তি সৃষ্টি করে বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৬. কীভাবে বুঝব আমার যোনি স্রাব স্বাভাবিক, নাকি চিকিৎসার প্রয়োজন?
যদি আপনার স্রাবের রঙ অস্বাভাবিক (হলুদ, সবুজ বা ধূসর), তীব্র গন্ধযুক্ত হয় বা চুলকানি, জ্বালা বা ব্যথার সঙ্গে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন, বিশেষ করে রঙ, গন্ধ বা ঘনত্বের পরিবর্তন, সংক্রমণ বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে যা চিকিৎসার প্রয়োজন।
উপসংহার:
যোনি স্রাব নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি স্বাভাবিক অংশ। তবে, এর রঙ, গন্ধ বা ঘনত্বে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে তা সংক্রমণ বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। সন্দেহ হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।